কাজী সাঈদ ॥ বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ জুলাই। গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বড় দুই জোট এখনও তাদের প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
বরিশাল জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন অবশ্য বলেছেন, ৩০ জুলাই বিসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তারা এখনও দাফতরিক নির্দেশনা পাননি। তবে নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব ফরহাদ হোসেন জানান, মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে প্রযোজ্য তফসিল ১৩ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হবে। প্রতীক বরাদ্দের আগ পর্যন্ত কোনও প্রার্থী নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না।
ফরহাদ হোসেন জানান, নির্বাচন কমিশনের মঙ্গলবারের বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৩ থেকে ২৮ জুন মনোনয়নপত্র জমা, ১ ও ২ জুলাই মনোনয়নপত্র বাছাই, ৩ থেকে ৫ জুলাই আপিল, ৬ থেকে ৮ জুলাই আপিলের নিষ্পত্তি, ৯ জুলাই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং ১০ জুলাই প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। নারীদের জন্য সংরক্ষিত ১০টি এবং ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বরিশাল সিটি করপোরেশনের আয়তন ৫৮ বর্গ কিলোমিটার। ৫ লাখ নাগরিকের বাস এই নগরীতে। নির্বাচন অফিস প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুসারে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় ভোটার ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০২ জন।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বলেন, তারা এখনও তাদের মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করেননি। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে মহানগরের যুগ্ম-সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে মেয়র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য তারা সুপারিশ করবেন। তবে এ বিষয়ে দলের সভানেত্রী এবং কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে জানান তিনি। যিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন তাকে বিজয়ী করতে দল সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করবে বলে মহানগর আওয়ামী লীগের এই নেতা জানান। অন্যদিকে, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব এবং মহানগর সভাপতি ও বিসিসি’র প্রথম নির্বাচিত মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এরই মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাদের অধীনে আর কোনও নির্বাচনে যাওয়া হবে কিনা তা দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। গাজীপুর সিটির নির্বাচন দেখে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। দলের মেয়র প্রার্থী এখনও চূড়ান্ত করা না হলেও দল নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে এবং প্রার্থী মনোনয়ন দিলে তার জন্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা হবে জানান সাবেক এই হুইপ।
জাতীয় পার্টি (এরশাদ) জেলা সভাপতি মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, তাদের দলের পক্ষ থেকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ইকবাল হোসেন তাপসকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়ার জন্যে সুপারিশ করা হবে। বাম মোর্চার পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) জেলা সভাপতি ডা. মণীষা চক্রবর্তীকে মেয়র পদের জন্যে মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জোটের নেতা সিপিবি জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ। ২০০১ সালের ৪ এপ্রিল ‘বরিশাল সিটি করপোরেশন আইন’ পাস হওয়ার পর ২০০২ সালের ২৫ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে সিটি করপোরেশন হিসেবে বরিশালের যাত্রা শুরু হয়। ২০০৩ সালে ২০ মার্চ বিসিসি’র প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপি’র বর্তমান কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব, মহানগর সভাপতি ও সাবেক হুইপ মজিবর রহমান সরোয়ার। তবে তার মেয়াদপূর্তির আগেই ওয়ান-ইলেভেনের সেনাসমর্থিত সরকারের সময় তিনি গ্রেফতার হন। ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট বিসিসি’র দ্বিতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শওকত হোসেন হিরন মাত্র ৬ শতাধিক ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমদ সেন্টুকে পরাজিত করেন। এরপর আওয়ামী লীগের প্রার্থী শওকত হোসেন হিরনকে হারিয়ে ২০১৩ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল আনারস প্রদিক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। গত নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১১ হাজার ২৫৭ জন (১ লাখ ৩ হাজার ৬৩২ জন নারী এবং ১ লাখ ৭ হাজার ৬২৫ জন পুরুষ)। ওই নির্বাচনে মেয়র পদের জন্য ৩ জন, ১০টি সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য ৪৫ জন এবং ৩০টি সাধারণ কাউন্সিলর আসনের জন্য ১১৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
Leave a Reply